শেষ কবে দীর্ঘ সময় ক্যাবল টেলিভিশনের সামনে বসেছি, তা মনে করতে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে। আমার মতো অনেকেরই হয়তো একই অবস্থা! ঠিক একইভাবে পিছিয়ে পড়েছে কাগজের পত্রিকা পড়ার হার। অনলাইনের সংবাদ জেনে নেওয়ার ইচ্ছা বাড়ছে। কিন্তু কোনো খবর কি আমাদের জানা বাকি? একটিবারও কি প্রশ্ন করেছি নিজেকে, কীভাবে?
মোবাইলের নেটওয়ার্ক ড্রপ হয় কিন্তু বন্ধ হয় না সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন। আমাদের প্রতিদিনকার প্রতিটি মুহূর্তের গল্প এখানেই। মাঝেমধ্যে তো সোশ্যাল মিডিয়া আর মিডিয়াকে আলাদা করাই দুষ্কর। এই নিয়ে বিস্তর মতভেদ আছে, সে এক ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু আজ নজর পড়ল সেই সোশ্যাল মিডিয়াতেই এক সহকর্মীর শেয়ার করা সংবাদ। সংবাদটি বয়ে এসেছে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে একটি ঐতিহাসিক আইন পাস হয়েছে। এই আইন পাসের ফলে ফেসবুক-গুগল তাদের প্ল্যাটফর্মে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সংবাদ প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দেবে।
অস্ট্রেলিয়া সরকার বলছে, ‘নিউজ মিডিয়া অ্যান্ড ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মস ম্যান্ডেটরি বার্গেনিং কোড’ নামের এই আইন সংবাদ ব্যবসার জন্য ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনবে। আর দেশটির জনস্বার্থে সাংবাদিকতাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।
এর মানে দাঁড়াল, যেকোনো গণমাধ্যমের তৈরি কনটেন্ট ফেসবুক বা গুগলের মাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে। সেটি হবে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে। দুই পক্ষে সমঝোতা না আসলে, তারা স্বাধীন সালিসের আশ্রয় নিতে পারবেন।
আসলেই তো তাই। নিজেদের অর্থ, পরিশ্রম, মেধায় তৈরি কনটেন্টে মূল্য কেন পাবেন না তারা, যখন এই কনটেন্ট থেকে সত্যিকারভাবে অর্থসংস্থান হচ্ছে। এটুকু অধিকার তো তাদের থাকারই কথা। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো, যখন তথ্য পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হয়, তখন এমন একটি অর্থ জোগানের সুযোগ কোনো কারণে অগ্রাহ্য করা হবে।
এবার আসুন একটু ফিরি আমাদের গণমাধ্যমশিল্পের দিকে। রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি আমরা আমাদের প্রচলিত ব্যবসারীতিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালিত করতে গিয়ে। প্রতিবছরই গণমাধ্যম বাড়ছে আর তার মালিকানায় মূলত ব্যবসায়ীরাই। সে ক্ষেত্রে একটা সময় পর ঠিকই দেখতে হচ্ছে বিনিয়োগের ফেরত আসার সম্ভাবনাটুকু। তখনই ঘটছে বিপত্তি। প্রায় একই পরিধির বাজারে শুধু মুখ বাড়ছে আর সে কারণেই প্রত্যেকের প্লেটে কমছে খাবার, অগত্যা চলছে ছাঁটাইসহ নানা কস্ট কাট।
আমরা কজনই বা নতুন ডিজিটালাইশনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেছি, কতজনই বা খুঁজেছি মুনাফার নতুন উৎস। যদিও নতুন উৎসগুলো আমাদেরই চারপাশে একটু একটু আঁকড়ে বসেছিল। এই আইন চোখে আঙুল দিয়ে দিল, এখানে আছে নতুন কিছু যোগ, যা তোমার অধিকার, প্রাপ্য।
নতুন আইনের ফলে ফেসবুক ও গুগলের কোটি কোটি ডলার অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। গুগলের শোকেসে যেসব সংবাদ প্রদর্শিত হবে, তার জন্য তারা এখন অর্থ পরিশোধ করবে। অন্যদিকে ফেসবুকের নিউজ ফিডে যেসব সংবাদমাধ্যমের খবর থাকবে, তাদের অর্থ দিতে পারে ফেসবুক।
গুগল ইতোমধ্যে স্থানীয় মিডিয়া কোম্পানিগুলোর সঙ্গে লাখো ডলারের চুক্তি করেছে। অন্যদিকে ফেসবুকও অস্ট্রেলিয়ার একটি গণমাধ্যম কোম্পানির সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে।
ফেসবুক ও গুগল জানিয়েছে, আগামী তিন বছরে তারা পৃথকভাবে সারা বিশ্বে সংবাদ খাতে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ করবে। এরই মাঝে কানাডা বলেছে, তারা হাঁটবেন একই পথে। কিন্তু বাংলাদেশ? এখনই সময় গণমাধ্যমের স্বার্থে আমাদেরও একই পথ অনুসরণের।
এই সুযোগের অর্থযোগের সম্ভাবনার পাশাপাশি সবাই খুঁজুক নতুন বাজার, আরও সুসংহত হোক গণমাধ্যম, নিজের পায়ের নিচের মাটিটা প্রতিনিয়ত শক্ত হোক, হোক সুদৃঢ়।
লিংক: এই লেখাটি ঢাকা পোস্ট অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:৪৮